কৃমির ঔষধের নাম ও খাওয়ার নিয়ম ২০২৫

কৃমির ঔষধের নাম ও খাওয়ার নিয়ম, মানব দেহের জন্য ক্ষতিকর প্রাণী হচ্ছে কৃমি। আজকের এই পোষ্টটি পড়ে আপনারা জানতে পারবেন কৃমি হওয়ার কারণ এবং কিভাবে মানব দেহে থেকে কৃমি দূর করা যায় সেই সম্পর্কে।

যে সকল ব্যক্তি কৃমি রোগে আক্রান্ত হয়েছেন তারা হয়তো জানেন কিভাবে কৃমি ওষুধ ব্যবহার করতে হয়। কিন্তু যে সকল ব্যক্তি নতুন কৃমি রোগ আক্রান্ত হয়েছেন তারা জানেন না কিভাবে ওষুধ ব্যবহার করতে হয়। কৃমির ঔষধের নাম এবং কোন ওষুধটি বেশি কার্যকারিতা সম্পূর্ণ সেই সম্পর্কে জানতে পারবেন। তাই আপনারা আজকের এই পোস্টটি মনোযোগ সহকারে পড়বেন।

কৃমি হওয়ার কারণ

মানবদেহের ক্ষতিকর পরজীবী হচ্ছে কৃমি কৃমি হওয়ার প্রধান কারণ হচ্ছে নোংরা পরিবেশ। অপরিষ্কারভাবে থাকা সঠিকভাবে সাবান দিয়ে হাত না ধুয়ে খাওয়া এবং আঙ্গুলের নখ বড় বড় রাখা এইসব কারণে মানবদেহে কৃমি প্রবেশ করে।

বর্তমানে আমাদের সমাজে কৃমি রোগ নিয়ে অনেক ভুল ধারণা রয়েছে যেমন যদি আমরা মিষ্টি বেশি খাই তাহলে কৃমি হয় এবং বাচ্চাদের ক্ষেত্রে অনেকে মনে করেন যে দাঁত কামড়ালে বা মুখে থেকে লালা জড়ালে কৃমি হয় এগুলো সব ভুল ধারণা।

কৃমি হওয়ার লক্ষণ

কৃমি হওয়ার লক্ষণ যদি কোন ব্যক্তির কৃমি হয় তাহলে তার দেহে অনেক ধরনের লক্ষণ দেখা দেয়। এর মধ্যে রয়েছে পেট ব্যথা কৃমি আক্রান্ত ব্যক্তির ব্যাপকভাবে পেট ব্যথা করে। কিছু কিছু রোগীর কৃমি আক্রান্ত হলে বমি হয় এছাড়াও রয়েছে ক্রিমি আক্রান্ত ব্যক্তির ক্ষুধা মন্দা ভাব শরীর দুর্বলতা ডায়রিয়া রক্তশূন্যতা হঠাৎ ওজন কমে যাওয়া ইত্যাদি। সাধারণত বাচ্চা শিশুদের কৃমি আক্রান্ত হলে শিশুদের নাক মুখ এবং পায়খানার সাথে কৃমি বাহির হয় তাই খুব সহজেই আপনারা বুঝতে পারবেন কৃমি হওয়ার লক্ষণ।

কৃমি হলে যে সকল উপসর্গ দেখা দেয়ঃ

  • রোগীর বমি বমি ভাব হবে। 
  • রোগীর পেট ব্যথা হবে।
  • পেট ফুলে যাবে। 
  • রোগীর খাবার অ-রুচি আসবে।
  • রোগীর মুখে প্রচুর থুথু উঠবে। 

কৃমি যেভাবে ছড়ায়

কৃমি হচ্ছে একটি পরজীবী প্রাণী কৃমির একমাত্র খাবার হচ্ছে রক্ত। সাধারণত আমাদের দেহের কৃমি প্রবেশ করে খাদ্য গ্রহণের মাধ্যমে। কৃমির ডিম সাধারণত খাবার পানিতে,  নোংরা টাকার মধ্যে, বাথরুমের দরজার হেন্ডেলে, পশু পাখির লালায়,  বিড়ালের শরীরে, কুকুরের লোমে ইত্যাদি জায়গায় থাকে।সাধারণত কৃমির এই ডিম গুলো আমাদের খাদ্য গ্রহণের সময় আমাদের দেহে প্রবেশ করে এবং আমাদের দেহে প্রবেশ করে সংক্রমণ বাড়ায় এবং বংশবৃদ্ধি করে ও দেহের অন্যান্য অংশ ছড়িয়ে দেয়।

কৃমির ঔষধের নাম

বর্তমানে বাজারে অনেক ধরনের কৃমির ওষুধ রয়েছে কিন্তু এখন আপনাদের মনে প্রশ্ন জাগতে পারে সবচাইতে ভালো কৃমির ওষুধ কোনটি? বড়দের জন্য সবচাইতে ভালো কৃমি ওষুধের নাম এবং বাচ্চাদের জন্য সবচাইতে ভালো কৃমি ওষুধের নাম এবং কৃমি ওষুধ খাওয়ার পরে কোন ভিটামিন খেতে হবে এই সকল বিষয়ে জানতে চান তাহলে অবশ্যই আমার এই আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়বেন।

কৃমির ঔষধের নাম গুলোঃ 

  • Albendazole (আলবেনডাজল)
  • Mebendazole (মেবেনডাজল)
  • Praziquantel (প্রাজিকুয়ান্টেল)
  • Ivermectin (আইভারমেকটিন)
  • Levamisol (লেভামিসল)

আপনাদের মনে প্রশ্ন থাকতে পারে এই কৃমির ওষুধ গুলোর মধ্যে সবচাইতে কোন ওষুধটি ভালো? তাই আপনাদের জন্য আরো কিছু ভালো কৃমির ওষুধের নাম নিচে দেওয়া হলোঃ

  • Almex tablet
  • Albezen tablet
  • Ben-A tablet
  • Estazol tablet

কৃমির ঔষধ কোনটা ভালো

আপনারা যারা কৃমির ঔষধ কোনটা ভালো এই এই বিষয়ে জানতে চাচ্ছেন তারা অবশ্যই নিচের এই ওষুধ গুলো দেখতে পারেন। নিচের এই ওষুধগুলো কৃমির জন্য খুব কার্যকারী তাই আপনারা এই ওষুধগুলো কৃমি রোগের জন্য জন্য ব্যবহার করতে পারেন আশা করি খুব ভালো ফল পাবেন।

অ্যালমেক্স ট্যাবলেট

অ্যালমেক্স ট্যাবলেট হচ্ছে বাজারে সবচাইতে ভালো মানের কৃমি রোগের ট্যাবলেট। বর্তমানে স্কয়ার ফার্মাসিটিক্যাল লিমিটেড অ্যালমেক্স ট্যাবলেট উৎপাদন করে থাকে। বর্তমানে স্কয়ার ফার্মাসিটিক্যাল লিমিটেডের অ্যালমেক্স ট্যাবলেট দাম হচ্ছে প্রতি পিস মাত্র ৫ টাকা।

Albezen ট্যাবলেট

জেনিথ ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড বর্তমানে খুব কার্যকারী একটি কৃমিনাশক ওষুধ তৈরি করছে এই ওষুধটি সেবনের ফলে খুব দ্রুত কৃমি রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।  জেনিথ ফার্মেসিউটিক্যাল লিমিটেডের আলবিজেন ট্যাবলেট এর বর্তমান বাজার মূল্য প্রতি পিস ৩ টাকা করে।

Estazol ট্যাবলেট

এস্টাজল ট্যাবলেট খুব কার্যকারী একটি কৃমিনাশক ট্যাবলেট। ইবনে সিনা ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড এর তৈরি এইক্রিমিনেশন ট্যাবলেটটি মানব দেহের জন্য খুবই উপকারী। ইবনে সিনা ফার্মাসিটিক্যাল লিমিটেড কোম্পানির এই কৃমিনাশক ট্যাবলেট এর দাম মাত্র ৪ টাকা।

Durazol ট্যাবলেট

মিল্লাত ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড কোম্পানি বর্তমানে এই কৃমিনাশক ট্যাবলেটটি তৈরি করে থাকে। এই কৃমিনাশক  ট্যাবলেট সঠিকভাবে সেবন করলে খুব দ্রুত কৃমি রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। মিল্লাত ফার্মাসিটিক্যাল কোম্পানি লিমিটেডের কৃমিনাশক ট্যাবলেটের দাম হচ্ছে ৩ টাকা।

বেন – এ ট্যাবলেট

Acme Laboratories Ltd এর উৎপাদিত ওষুধ হচ্ছে বেন-এ ট্যাবলেট।  আপনারা যারা কৃমি রোগে আক্রান্ত তারা অবশ্যই বেন- এ ট্যাবলেটটি গ্রহণ করতে পারেন যার ফলে খুব দ্রুত আপনি কৃমি রোগ থেকে মুক্তি পাবেন। বর্তমানে বেন- এ  ট্যাবলেট টির  বাজার মূল্য হচ্ছে ৫ টাকা।

কৃমির ঔষধ খাওয়ার নিয়ম

আপনাদের অনেকের মনে প্রশ্ন জাগতে পারে বাচ্চাদের কৃমির ওষুধের নাম কি? এবং বাচ্চাদের কৃমির ওষুধ কিভাবে খেতে হয়? আপনাদের চিন্তার কোন কারণ নেই আমার এই আর্টিকেলের মাধ্যমে আপনাদের বাচ্চাদের কিভাবে কৃমি ওষুধ সেবন করতে হয় সেই বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হলো।

  • সাধারণত শিশু বাচ্চাদের টিকা কেন্দ্রে নিয়ে কৃমির ওষুধ খাওয়ানো সবচেয়ে ভালো পদ্ধতি।
  • কৃমি সংক্রমণ রোধ করতে হলে অবশ্যই আপনাকে প্রতি চার থেকে ছয় মাস পর পর কৃমিনাশক ট্যাবলেট খেতে হবে।

অ্যালবেনডাজোলঃ বর্তমানে যেকোন ফার্মেসিতে অ্যালবেনডাজোল এলবেন বা সিনটেল ইত্যাদি নামে পাওয়া যায়। সাধারণত দুই বছরের বেশি বয়সী শিশু বাচ্চাদের জন্য দুই চামচ সিরাপ প্রতিদিন সকালে এবং রাতে খাওয়াতে হবে। এক বা দুই বছরের শিশু বাচ্চাদের জন্য এক চামচ সিরাপ প্রতিদিন সকালে এবং রাতে খাওয়াতে হবে।  যদি এরপরও আপনার বাচ্চার কৃমি চলে না যায় তাহলে আপনি তিন সপ্তাহ পরে আবার উপরের নিয়মে এই সিরাপটি খাওয়াতে পারবেন।

লিভোমিসোলঃ  সাধারণত শিশু বাচ্চার ওজনের উপর ভিত্তি করে লিভোমিসোল এর ডোজ দেওয়া হয়। ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ১ কেজি ওজনের শিশু বাচ্চার জন্য ৩ মি.গ্রাম লিভোমিসোল ডোজ দেওয়া হয়।

মেবেনডাজেলঃ মেবেনডাজেল আপনি ফার্মেসিতে মেবেন বা এরমক্স নামে পেয়ে যাবেন। বর্তমানে মেবেনডাজেল ট্যাবলেট ও সিরাপ আকারে বাজারে পাওয়া যাচ্ছে। যদি আপনার শিশু বাচ্চার বয়স ২ বছর হয় তাহলে ১০০ মিলিগ্রাম করে প্রতিদিন দুইবার পরপর তিনদিন খাওয়াবেন।

কৃমি দূর করার উপায়

কৃমি রোগ থেকে মুক্তি পেতে হলে অবশ্যই আপনাকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা থাকতে হবে। কৃমি রোগ হওয়ার একমাত্র কারণ হচ্ছে অপরিষ্কার থাকার জন্য। তাই অবশ্যই টয়লেট থেকে বের হওয়ার পরে ভালোভাবে সাবান দিয়ে হাত ধৌত করবেন। খাবার খাওয়ার আগে অবশ্যই সুন্দরভাবে সাবান দিয়ে হাত দিয়ে খাবার খাবেন। আপনার শিশু বাচ্চা থেকে খাওয়ানোর আগে অবশ্যই সব কিছু পরিষ্কার করে নিবেন এবং প্রতি সপ্তাহে নখ পরিষ্কার করবেন।

আমরা উপরের আলোচনা থেকে জানতে পারলাম কৃমি রোগ কিভাবে হয় এবং কিভাবে কৃমি রোগ প্রতিরোধ করা যায়। কৃমির ঔষধের নাম ও খাওয়ার নিয়ম এবং কিভাবে ওষুধ সেবন করতে হয়। বর্তমানে বাজার প্রচলিত সবচাইতে ভালো ওষুধ কোনগুলো সেই সম্পর্কে সকল তথ্যই পোষ্টের মাধ্যমে পেয়ে গেলাম। যদি আমার এই আর্টিকেল পড়ে ভালো লেগে থাকে তাহলে অবশ্যই বেশি বেশি শেয়ার করবেন এবং প্রতিদিন আমার ওয়েবসাইটে ভিজিট করবেন।

আরও পড়ুনঃ

Leave a Comment